
ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতে। নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনপুরার প্রায় অর্ধলাক্ষ জেলে। মাছ ধরার জাল, নৌকা ও ট্রলার মেরামত করছেন তারা। আশা, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ ধরে ধার-দেনা পরিশোধের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবেন আবার। শনিবার সরেজমিন জেলেদের সঙ্গে কথা এসব তথ্য জানা যায়।সুনশান নীরব ঘাটগুলোও হয়ে উঠছে কর্মচঞ্চল
শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তাই ঋণ নিয়ে নৌকা মেরামত আর জাল কিনেছেন অনেকে। কেউ আবার পুরোনো জালকেই মেরামত করছেন। মনপুরার বিভিন্ন ঘাটে প্রস্তুত রয়েছে সারি-সারি নৌকা আর ট্রলার।
মনপুরা উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২১ দিনে মেঘনা নদীতে জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ৬০টি যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
এই অভিযানে ১৪ অসাধু জেলেকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১১জন কে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করা হয়েছে । এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কেজি ইলিশ,৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল ও ৮টি বোট জব্দ করা হয়েছে।জব্দকৃত জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। ইলিশ স্থানীয় মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে এবং জব্দকৃত বোট নিলামে বিক্রি করেছে মৎস্য বিভাগ।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময় বেশির ভাগ জেলে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকলেও উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ইলিশ শিকারের খবর পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চিক কয়েক জন জেলে জানান, অন্যবারের তুলনায় এবারের নিষেধাজ্ঞা ছিল নড়বড়ে। এ কারণে প্রচুর জেলে মেঘনা ও বঙ্গবসাগরে মা-ইলিশ শিকার করতে পেরেছে। ফলে আমরা যারা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে যাইনি, তারা কেউ মহাজন থেকে, কেউ এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালিয়েছি।
দক্ষিণ সাকুচিয়া জনতা ঘাটের জেলে আঃ রশিদ মাঝি, মো. মহিউদ্দিন মাঝি ও কবির বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সরকার আমাদেরকে শুধু ২৫ কেজি করে চাল দিয়েছে, যা ৮-১০ দিনেই শেষ হয়েছে। বাকি দিনগুলো পরিবার নিয়ে কষ্টে কাটিয়েছি। তবুও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে যাইনি। আশা করি, নদীতে গিয়ে এবার কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মাছ পাব। এতে বিগত দিনের ধারদেনা শোধ করে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারব।
মনপুরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জল বনিক বলেন, ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়টাতে ইলিশ মিঠাপানিতে ছুটে আসে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরবে ।
উল্লেখ,উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৪ হাজার ৪শত ৭১ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিকেরও অধিক।
