
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর। শেষ পর্যন্ত যাই ঘটুক না কেন, এটা স্পষ্ট যে নির্বাচনী প্রচার ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাশার মতো মসৃণ হয়নি। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মোকাবিলায় তাদের ঘাম ঝরাতে হয়েছে। যদিও তাদের প্রত্যাশা ছিল যে ট্রাম্প শেষ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান এই প্রার্থী নির্বাচনে হারলেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রমাণ করে তিনি ‘অযোগ্য’ ছিলেন না। যদিও একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে তিনি এখনও এতটা শক্ত প্রতিযোগী কীভাবে? এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো, যতটা ভাবা হয় জাতীয় রাজনৈতিক পরিবেশ গণতান্ত্রিক বিজয়ের জন্য ততটা অনুকূল নয়। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের
এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের কাছে স্পষ্টতই ট্রাম্প মাথাব্যথার কারণ। সর্বশেষ নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপে, মাত্র ৪০ শতাংশ ভোটার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাজে সন্তুষ্ট এবং মাত্র ২৮ শতাংশ বলেছেন, দেশ সঠিক পথে চলছে। বেশিরভাগ আমেরিকান যখন দেশ বা প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট, সে অবস্থায় তার দল হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি।
জরিপ বলছে, ডেমোক্র্যাটদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বহুমুখী। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো, রিপাবলিকানরা দেশজুড়ে সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। জরিপগুলো রিপাবলিকানদের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গণতন্ত্র ও গর্ভপাতকে। আর ডেমোক্র্যাটদের চ্যালেঞ্জ উন্নত বিশ্বের শাসক দলগুলোর জন্য রাজনৈতিক সংগ্রামের বৃহত্তর প্রবণতার অংশ বলেও মনে হচ্ছে।
ভোটাররা সুযোগ পেলেই পরিবর্তনের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং সম্প্রতি জাপানের ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে বা ক্ষমতা হারিয়েছে। ট্রাম্পও চার বছর আগে হেরেছিলেন। ফ্রান্স ও কানাডাও এই তালিকায় যোগ দিতে পারে।
দেশ ও দলভেদে কিছু বিষয় পরিবর্তিত হলেও বেশিরভাগ চিত্রই এমন। করোনা মহামারী ও একাধিক যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়টি ভোটারদের ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করে তুলেছে। এজন্য ক্ষমতাসীন দলগুলো জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোয় অভিবাসন, জ্বালানি ও অপরাধের মতো বিষয়ে ডেমোক্র্যাটরা ডানদিকে হেলে পড়েছে। তারা সমাজিক নিরাপত্তা জাল বিস্তৃত করতে ঐতিহ্যগত উদারপন্থী ভূমিকা পালন করেছে। তবে ফল যাই হোক না কেন, আমেরিকার রাজনীতিতে উদারপন্থী উত্থানের দিন ফুরাতে চলেছে।
২০০৮ সাল থেকে আমেরিকান রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাট ও উদারতাবাদ প্রভাবশালী ছিল। টানা চারটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জিতেছে ডেমোক্র্যাটরা। তারা গাড়ি শিল্প বাঁচিয়েছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো এবং আরও অনেক কিছুতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
তবে যুক্তিসঙ্গত হোক বা না হোক মহামারী পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ উদারবাদের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদের হার বিপুল সংখ্যক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। অভিবাসীদের ঢেউ নিয়ে শিথিল নীতিকেও এক্ষেত্রে দায়ী করা যেতে পারে। এ ছাড়া গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বিশৃঙ্খলার মতো বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা ২০০৮ সালে স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু থেকে শুরু করে অভিবাসন এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় ৪০ বছরের দীর্ঘ নীতির তালিকা নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে। তারা গত ১৬ বছরে এই এজেন্ডা নিয়েই কাজ করেছে। তবে অনেক ভোটার এখনও দেশের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। ডেমোক্র্যাটদের ভোটারদের আস্থা হারানো এবং ক্রমবর্ধমান ইস্যুতে ধরাসায়ী রিপাবলিকানদের জয়ের একটি ভালো সুযোগ করে দিয়েছে।
ট্রাম্প জয়ী হলে এর বড় কারণ হবে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের মোহভঙ্গ। তাঁকে নিয়ে গুরুতর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও অনেক ভোটার ডেমোক্র্যাটদের আর সুযোগ দিতে অনিচ্ছুক। যদি তিনি হেরে যান, তবে ব্যাখ্যাটিও একইভাবে সহজ হবে। এতে প্রমাণ হবে ভোটাররা এখনও গণতন্ত্রকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেখতে চান। তবে ইতিহাসবিদরা যখন ফিরে তাকান তখন তারা উপসংহারে পৌঁছান যে উদারপন্থী উত্থান ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
