
সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে বেতনের বাইরে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন সময় ১২০ কোটি টাকা তুলেছেন। এখন স্থগিত করা তার ব্যাংক হিসাবে স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা।
মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন তাপস এবং তাদের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের ব্যাংক হিসাবে এসব অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। কোথা থেকে এলো এত টাকা, এই অর্থ পাচার হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ৬ অক্টোবর বিএফআইইউ মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব করে। তার ব্যাংক হিসাবের বাইরে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তি নিকেতনে ১৬৫, রোজা গ্রীণে তাদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেন তাপসের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে ২০১৭ সালের ২ মে একটি হিসাব খোলা হয়। যেখানে মুন্নী সাহাকে নমিনি করা হয়েছে।
এ ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব আগেই খোলা হয়। এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়ান ব্যাংক থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার।
প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারস্পারিক ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বিভিন্ন তারিখে হিসাব দুটির মধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আলাদা তিনটি চেকের মাধ্যমে এমএস প্রমোশনের হিসাব থেকে প্রাইম ট্রেডার্সের হিসাবে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা সন্দেহজনক। এই অর্থ পাচার হয়েছে কি না তা যাচাই করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে চলতি হিসাব খোলা হয় ২০০৪ সালের ২১ জুলাই। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে।
গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৩ আগস্ট স্থানীয় বাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার টন মটর কেনার জন্য ৯০ দিন মেয়াদি ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর করে ওয়ান ব্যাংক।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় দুবার মেয়াদ বাড়ায় ব্যাংক। তবুও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সুদ মওকুফসহ পুনর্গঠন করা হয়।
২০১২ সালের জুনে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয়বার ঋণ পুনর্গঠন করে ব্যাংক। তৃতীয় দফা পুনর্গঠনের সময় ব্যাংকটি সুদ মওকুফ করে ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এতে তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে মেয়াদ এবং ভবিষ্যৎ সুদ আদায় বন্ধ রাখা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির ফলে ঋণটি ছয় ধাপে ৬ বছরে ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধের সময় দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গ্রাহক ২০১৯ সাল পর্যন্ত কিস্তি দিলেও ২০২০ সালের পর আর পরিশোধ করেননি। ২০২১ সালে ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকার ঋণ ৩৯টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেন ২০১৭ সালের ২ মে এমএস প্রমোশন নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার চলতি হিসাব খোলেন। কবির হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৬ জুন ১৮ কোটি টাকার ওভার ড্রাফট (ওডি) ঋণ দেওয়া হয়।
ঋণের দায় শোধ না হওয়ায় গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারির সভায় ঋণটি নবায়ন করা হয়।
পরবর্তী সময় একই বছরের ২৪ নভেম্বরের নির্বাহী কমিটির সভায় অপরিশোধিত ঋণ হিসাবটি নবায়নসহ ওডি ঋণ সীমা বাড়িয়ে ২৫ কোটি টাকা করা হয়। ২০২২ সালে ঋণ হিসাবটি ৫ বছর মেয়াদি ঋণে পুনঃতফশিল করা করা হয়েছে।
মুন্নি সাহা টেলিভিশন সাংবাদিক ও টকশো সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত। তিনি আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজে দীর্ঘ সময় কাজ করার পর একুশে টেলিভিশনে যোগ দেন। এরপর এটিএন বাংলায়, সেখান থেকে এটিএন নিউজে যোগ দেন তিনি। ২০২৩ সালের ৩১ মে তিনি এটিএন নিউজ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ‘এক টাকার খবর’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট যাত্রাবাড়ি থানায় ওই মামলা করেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা কামরুল ইসলাম। সেই মামলার আসামি মুন্নী।
 
        
 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                