
নারী ও কিশোরীদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলী নারী ও কিশোরীদের জলবায়ু সক্ষমতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতাই এবং কার্যকর উদ্যোগ বৃদ্ধি, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সরকারকে নারী শিক্ষায় বরাদ্দ, সরকারকে দরিদ্র পরিবারের নারী ও কিশোরীদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা, জলবায়ু অর্থায়নের ন্যায্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে জেন্ডার ন্যায্যতা নিশ্চিত, সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের নারীর প্রতিসহিংসতা ও বাল্যবিবাহ বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সমাজ হতে দারিদ্রতা মুক্ত করতে পরিকল্পিত বিনিয়োগের বিকল্প নাই। মানববন্ধন উপলক্ষে কিশোরী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগন এসব দাবী তুলে ধরে।
আজ ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, লর্ডহার্ডিঞ্জ সৈয়দাবাদ নুরজাহান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সামনে কোস্ট ফাউন্ডেশন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সক্ষমতা প্রকল্পের আওতায় লর্ডহার্ডিঞ্জ কিশোরী শিক্ষা কেন্দ্রের আয়োজনে কিশোরীদলে সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র-ছাত্রী, যুব প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিসিআর প্রকল্পের  প্রোগ্রাম অফিসার, রাজিব ঘোষের পরিচালনায় মানববন্ধনে সভাপত্বি করেন সৈয়দাবাদ নুরজাহান মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, মোঃ শফিউদ্দিন। মানববন্ধনে কিশোরী শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক রাবিয়া, ছাত্রী-নিহা, আছমা ও সমাজসেবক-মোঃ নিরব বক্তব্য রাখেন।
লর্ডহার্ডিঞ্জ কিশোরী শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক, রাবেয়া বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষনায় দেখা যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাল্যবিয়ের গড় হার অনেক বেশি, যা প্রায় ৬৫-৭০শতাংশের মত। পরিবার ও সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও দারিদ্রতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ কোনো না কোনোভাবে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এটা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য সুনিদৃষ্ট উপরোক্ত ভাবে ৬টি দাবী উত্থাপন করে।
নিহা বলেন, আমরা দাবী জানাচ্ছি বাল্যবিবাহ ও নারীর প্রতিসহিংসতা বন্ধে সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের সচেতন হতে হবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে আমাদের এলাকার বেশিভাগ পরিবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের শিকার হয়েছে, তারা নিজ বসতভিটা ও কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর অভিভাবকগন খরচ কমানোর জন্য মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিচ্ছে। তাই সরকারকে নিকট আমাদের জোর দাবী উপকূলীয় দরিদ্র পরিবারের নারী ও কিশোরীদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সমাজকে দারিদ্রতা মুক্ত করতে পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে হবে।
মোঃ নিরব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র পরিবারগুলো নেতিবাচক কৌশল অনুসরণ করছে, যেমন- সামান্য অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের জন্য বাল্যবিয়ে দিয়ে তাদের মেয়েদের স্কুল থেকে সরিয়ে নিচ্ছে, এছাড়াও যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তাই আজকের মানববন্ধন হতে উত্থাপিত দাবীসমূহ সরকার ও জনপ্রনিধিদেও বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
শিক্ষক, মাওলানা মোঃ শিহাবউদ্দিন বলেন, নারীর প্রতিসহিংসতা, বাল্যবিবাহ বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জুরুরি, এ জন্য সরকার ও জনপ্রতিনিধিদে অবশ্যই সচেতন হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাতে হবে। তবে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে অবশ্যই নারী শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে, তাদের স্বাবলম্বি করতে হবে।
শিক্ষক, মোঃ শফিউদ্দিন বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতা ছাড়া স্থায়ী দারিদ্র বিবোচন সম্ভব নয়, আর দারিদ্রতা দূর করতে না পরলে নারী ও কিশোরীদের প্রতিসহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তাই উপক‚লীয় ঝুঁকিপূর্ণ নারী ও কিশোরীদের জন্য পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে হবে, তাদের বিভিন্ন আয়বর্ধণমূলক কর্মসূচীতে অন্তভ‚ক্ত করতে হবে।
রাজিব ঘোষ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বহুমুখী আয়ের সন্ধান খুবই প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ এবং বিকল্প আয়ের সুযোগ সীমিত, জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই সুবিধাবঞ্চিত, আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের প্রধান শিকার হচ্ছে নারী ও কিশোরীরা, অর্থনৈতিক অক্ষমতা তাদেরকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এসকল সমস্যা সমাধানে সরকারকে অবশ্যই  জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ নারী ও কিশোরীর জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে।
 
        
 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                