
ভোলার বিছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার চতুর্পাশে মেঘনা নদী। শুষ্ক মৌসুমে মেঘনা নদীর পানি লবনাক্ত ধারণ করে। এতে করে নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরে। সেই সময় মিঠা পানির চরম সংকট দেখা দেয়। এতে করে লোকালয়ের মানুষ বিভিন্ন পুকুর ,দীঘি ও জলাশয় পানি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে মনপুরায় চৈত্র ও বৈশাখ মাসের শেষ দিক এসে মনপুরার অনেক পুকুর দীঘি ও জলাশয় শুকিয়ে চৈ চৈ হয়ে যায়। স্বল্প সংখ্যক পুকুরে ও দীঘিতে পানি থাকে তার মধ্যেই দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের হেলাল চৌধুরীর দীঘি উল্লেখযোগ্য। পুকুর টি ব্যক্তি মালিকানা হলোও দীঘিটি ব্যবহার করে রহমানপুর গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার।
দীঘিতে গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা কাজ করে এলাকাবাসী । মনপুরায় ১ হাজার ৯২ কোটি টাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে সেই পুকুরটি ভরাট করার উদ্যোগ গ্রহন করে প্রকল্প পাশ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) । দীঘির পাশে খনন কাজও শুরু হয়েছে । এতে করে দক্ষিণ সাকুচিয়া রহমানপুর গ্রামের বাসিন্দা একটি মিঠা পানির উৎস হারাবে বলে আশস্কা  করছে।
মনপুরার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের  প্রাণের দাবি মনপুরার টেকসই বেড়িবাঁধ। সেই বেড়িবাঁধ নির্মাণে যেমন খুশি হচ্ছে। তেমনি ভাবে মিঠা পানির উৎস হারানো চিন্তা রয়েছে।

মনপুরার দীর্ঘ ৪০ বছরের ঐতিহ্য দীঘিটি রক্ষা করার জন্য শতাদিক লোক জড় হয়ে গতকাল বিকেল ৫ টায় মানববন্ধন করেন । মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,এই পুকুরটি হেলাল চৌধুরীর হলেও আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করি। তারা ঢাকায় থাকে তারা এই দিঘি ব্যবহার করে না। আর এই দীঘির পাশে একটি মাছঘাট রয়েছে এখানে আমরা  শত শত জেলে এই পুকুরে গোসল ও রান্না কাজে ব্যবহার করি। এতে করে পুকুর টি রক্ষা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দূষ্টি আকর্ষণ করছি। নতুন করে জরিপ করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক ।  সেই সাথে জনস্বার্থ জড়িত পুকুর টি রক্ষা করা হোক ।
স্থানীয় হালিম,গিয়াসউদ্দিন মিজি,আবদুল হাই জানান, প্রতিবছর শীতকাল এলেই নানা রং-বেরঙের নাম জানা-অজানা পাখির সমাগম ঘটে হেলাল চৌধুরীর বাড়ির এই দীঘিতে। অতিথি পাখির বিচরণের চোখ-ধাঁধানো দৃশ্য মানুষের নজর কাড়ে । বর্ণিল সব অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠে প্রকৃতি ও পরিবেশে । এই দীঘি যদি ভরাট হয় এখন সব হারিয়ে যাবে এলাকাবাসীর এমনটাই অভিযোগ।
তারা আরো জানান,এই দীঘি থেকে কিছুদূর মনপুরার সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান মনপুরা দখিনা হাওয়া সী বিচ।আগত পর্যটকে এই দীঘিতে গোসল ও সাতার কাটে । এটি ভরাট হয়ে গেলে পর্যটকও কমার সম্ভাবনা  থাকবে । 
দীঘির স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন চৌধুরী মুঠোফনে বলেন,আমরা ঢাকায় বসবাস করি গ্রামে আমাদের থাকা হয় না। পুকুর টি ৭ বিঘা জমির উপরে খনন করা হয়েছে । এই দিঘি ওই এলাকার মানুষের জনস্বার্থ ব্যবহার করে। যেহেতু দিঘিটির সঙ্গে বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত আমিও চাই দীঘিটি রক্ষা করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক। তাই দিঘিটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
মনপুরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী আবদুর রহমান জানান,মনপুরায় ৫২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। মনপুরার সব চেয়ে বড় এই দিঘিটি রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জানানো হয়েছে । ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরজমিন পরিদর্শন করবে ।
জীব-বৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই ঐতিহ্যবাহী হেলাল চৌধুরীর দীঘি জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের যেমন দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন নতুন করে সার্ভে করে বেড়িবাঁধ নির্মান করা ।
ভূগর্ভে পানি ঢোকার একটা প্রাকৃতিক পথ হলো পুকুর, দিঘি বা এ ধরনের জলাশয়সমূহ। এই পথ সচল থাকলে পানির স্তর একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে থাকে, যা সব প্রাণীকে বেঁচে থাকতেও সহায়তা করে। উপরন্তু এলাকায় পুকুর ও দিঘিগুলো পানি ধরে রাখার ও সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করে। ফলে বৃষ্টির সময় বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকামুক্ত থাকে ও নানা রকম ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়। সার্বিক বিবেচনায় দিঘি ভরাট হয়ে যাওয়া পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত ভাবছেন স্থানীয় সচেতন মহল ।
 
        
 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                