
বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হামলা, পতাকা অবমাননা, ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথ্যের অপপ্রচার এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে এবার ঢাকা থেকে আগরতলা পর্যন্ত লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৩ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে একই দাবিতে ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদান করেছে এই তিন সংগঠন।
তিনি বলেন, ১১ ডিসেম্বর বুধবার নয়াপল্টন থেকে সকাল ৮ থেকে লংমার্চ শুরু হবে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র, যুবক এবং স্বেচ্ছাসেবী জনতাকে এই লংমার্চে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান যুবদলের সভাপতি।
মুন্না বলেন, আপনারা জানেন, বিগত ২ ডিসেম্বর, সোমবার, ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভারতের হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির একদল উচ্ছৃঙ্খল সদস্য কর্তৃক সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছে, মিশনের সম্পদ বিনষ্ট করেছে। সহিংস ঘটনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকায় ছিল, যা উক্ত ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের মৌনসম্মতিকে ইঙ্গিত করে। ভারত সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কূটনীতিকদের সুরক্ষা দিতে। এছাড়াও বিগত ২৮ নভেম্বরে কলকাতায়ও একই ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল মনে করছি, বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে সহিংস হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের সামিল।
তিনি বলেন, এছাড়া আপনারা আরও দেখেছেন, ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর কথা বলে একদিকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অবমাননা করেছেন এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
আপনারা আরও লক্ষ্য করেছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগামহীন প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত ছাত্র-জনতার সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে তারা ক্রমাগত ভিত্তিহীন এবং কল্পনাপ্রসূত খবর প্রচার করছে। তাদের অপপ্রচার এবং গুজবের কারণে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা একইসঙ্গে ভারতের সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, ভারত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনকে মেনে নিতে পারছে না। শেখ হাসিনার নির্দেশে দুই হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে রিয়া গোপ, হৃদয় তারুয়া, রুদ্র সেন, দীপ্ত দে, শুভ শীল, তনয় দাসসহ আরও অনেক বীর শহীদ। ভারত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আরও অনেক ব্যক্তি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত এখন বাংলাদেশি ক্রিমিনালদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বহিষ্কৃত ইসকন নেতা, বাংলাদেশের নাগরিক চিন্ময় দাসের গ্রেফতার, তদন্ত এবং বিচার সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, চিন্ময় দাসের অনুসারীদের হাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য এবং সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ খুন হওয়ার পরেও বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ গভীর সংযম দেখিয়েছে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন। অন্যদিকে, ভারত একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাপ্রবণ রাষ্ট্র। ভারত তার নিজের দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ। সুতরাং ভারতের কোনো নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার।
 
        
 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                