ঢাকাবুধবার , ৫ নভেম্বর ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উৎসব
  5. ঐতিহ্য
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. চাকরি
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. ধর্ম
  14. নির্বাচন
  15. পরিবেশ

চট্টগ্রামে গণসংযোগে গুলিবর্ষণে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, নিহত ১

অনলাইন ডেস্ক
নভেম্বর ৫, ২০২৫ ৪:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এ সময় এরফানুল হক শান্ত নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাও গুলিবিদ্ধ হন।

এছাড়া হামলায় সারোয়ার হোসেন বাবলা নামে আরও এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বাবলা শিবির নামধারী একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হামজারবাগ চালিতাতলী এলাকায় গণসংযোগ চলাকালে মোটরসাইকেল আরোহী চার দুর্বৃত্ত তাদের লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দুইজনকে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এরশাদ উল্লাহ এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপরজনও আইসিইউতে আছেন। গুলিবিদ্ধ আরেকজন মারা গেছেন।

নিহত সারোয়ার শিবির নামধারী একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা বলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কারা কেন এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের টিম ঘটনাস্থলে যায়। কারা কী কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে সেই বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।

তবে শিবিরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুটি গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। তবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এ হামলার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজিমুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, হামলার ঘটনাটি জামায়াত-শিবির ঘটিয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি এ হামালার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন- যারাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে যাতে গ্রেফতার করা হয়।

নিহত সারোয়ার হোসেন বাবলার পিতা আবদুল কাদের ঘটনাস্থলে যুগান্তর প্রতিবেদককে বলেন, এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের লোকজন। সাজ্জাদ এ পর্যন্ত ১৩টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেছেন।

গণসংযোগকালে প্রকাশ্যে একজন প্রার্থী ও তার অনুসারীদের ওপর এমন হামলার ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার তৈরি অন্য প্রার্থীদের মধ্যেও।

ঘটনার পর হাসপাতালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মীর ভিড় জমে। হতাহতদের স্বজনরাও হাসপাতালে ছুটে যান।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন লাভ করেছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। মনোনয়ন পাওয়ার আগে থেকেই তিনি এলাকায় গণসংযোগ করে আসছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর বুধবার বিকালে তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হামজারবাগ এলাকায় একটি নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করে বের হয়ে পুনরায় গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে এসে ৮ দুর্বৃত্ত এরশাদ উল্লাহ ও তার আশপাশে থাকা লোকজনকে গুলি করে। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। গুলি ছুড়েই দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল নিয়ে বীরদর্পে পালিয়ে যায়।

গুলিতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। তাদের উদ্ধার করে অনন্যা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরশাদ উল্লাহ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক একরামুল হক শান্তও এ সময় গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর এরশাদ উল্লাহ ও শান্তকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। বাবলা নামে অপরজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ ভোরে বাকলিয়া এক্সেস রোড চকবাজার থানার চন্দনপুরার মুখে প্রাইভেটকারে সারোয়ার বাবলাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছিল। এতে বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লা নামে দুইজন নিহত হলেও সারোয়ার হোসেন বাবলা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে বুধবারের হামলায় সন্ত্রাসীদের টার্গেট মিস হয়নি।

সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই রাতে নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে সহযোগী বাবুলসহ সারোয়ারকে গ্রেফতার করেছিল চান্দগাঁও থানা পুলিশ। ২৮ জুলাই পুলিশ তার সাত দিনের রিমান্ড চাইলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রায় ১৯টি মামলা রয়েছে। এইট মার্ডার মামলায় পলাতক শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের অনুসারী বুড়ির নাতি হিসেবে পরিচিত ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বাবলার দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জের ধরেই ছোট সাজ্জাদের লোকজন এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কে এই সারোয়ার

সারোয়ার ছিলেন চট্টগ্রামে আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের অন্যতম আসামি সাজ্জাদ আলী খানের অন্যতম সহযোগী। পরে বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে আলাদা দল গড়েন সারোয়ার। তখন সাজ্জাদের ডান হাত হয়ে ওঠেন ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ।

চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রায় দেড় দশক আগে আলোচনায় আসে সারোয়ার হোসেন বাবলা ও তার বন্ধু নুরুন্নবী ম্যাক্সনের নাম। সেই সময় তারা পরিচিত ছিলেন সাজ্জাদ আলী খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে। সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আট খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন।

২০১১ সালের জুলাইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল এলাকা থেকে গ্রেফতার হন ম্যাক্সন। তার দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সারোয়ারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

তখন সরোয়ার-ম্যাক্সনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, একে-৪৭ রাইফেলের দুটি ম্যাগাজিন ও গুলি।

২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে গিয়েছিলেন সারোয়ার ও ম্যাক্সন। প্রায় তিন বছর কাতারে ছিলেন সারোয়ার। সেখানে মারামারির এক ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করে এক মাসের সাজা দেয়। সাজা শেষে সারোয়ারকে তারা দেশে পাঠিয়ে দিলে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিমানবন্দরে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে জামিন পেয়ে বের হন।


সংবাদটি শেয়ার করুন....