ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উৎসব
  5. ঐতিহ্য
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. চাকরি
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. ধর্ম
  14. নির্বাচন
  15. পরিবেশ

মনপুরা মাঠজুড়ে আমন ধানের ম-ম গন্ধ

মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ ৩:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

এই হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন বাংলার হেমন্ত ঋতুর। মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সোনালি হলুদপাতা, আর বাতাসে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। হলুদ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। কেউ আবার আগাম ঘরে তুলছে সোনালি আমন ধান। তবুও নেই, নবান্ন উৎসব।

ভোলার মনপুরায় কৃষকের সবুজ মাঠ সোনালি রঙের পাকা ধানে ভরপুর। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার মহোৎসব। কৃষকের উঠোনে সোনা রাঙা ধানে শোভা পাচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় নতুন ধান ঘরে তুলতে মহা ব্যস্ত দিন পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। এক দিকে ধান কাটা আর অন্য দিকে ধান মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত তাঁরা। দিন দিন কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়া বাড়ছে পরিবর্তন ।

গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন। এ নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক এক উৎসব। কার্তিকের শেষে অগ্রহয়নের  শুরুতে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন। কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের স্বর্ণালি দিন।নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্যমেলায়।কিন্তু এখন সেই নবান্ন উৎসব বিলীন হয়ে গেছে ।বর্তমান প্রজন্মের কাছে এখন নবান্ন উৎসব রূপকথা গল্পেরমত ।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,মনপুরা  এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষি পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর। কৃষকেরা স্থানীয়, উফশী ও হাইব্রিড উভয় জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ নিয়ে মাঠে কাজ করছেন শ্রমিক ও কৃষকেরা।খেতে কেউ ধান কাটছে আবার কেউবা ধানের আঁটি বাঁধছে। আবার কেউ ধানের আঁটি মাথায় নিয়ে উঠোনে তুলছে। ধান মাড়াই করে শুকিয়ে নিচ্ছেন কৃষাণীরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলনে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। হাটে-বাজারে ধানের দাম একটু কম। হিসাব কষে এবার লাভের কথাই ভাবছেন তাঁরা।

গত আগস্টের বন্যায় মনপুরা ‍উপজেলা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে রোপণ করা ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা চার বারের চেষ্টায় আবারও চারা রোপণ করেন।

উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া রহমানপুর গ্রামের বাসিন্দা আঃ মতিন বলেন, এবার আমন মৌসুমে মনপুরার বেড়িবাঁধ এর অবস্থা ভালো ছিলো না । বার বার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় ধান রোপণের পর ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে আশার চাইতে বেশি ফসল ঘরে উঠছে। এখনো মাঠে পাকা ধান রয়েছে। শিগগিরই পাকা ধান কাটা শেষ হবে।

উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ফকিরহাট এর কৃষক জসিম  জানান, নতুন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই মাঠের ফসল ঘরে উঠাতে পেরেছি। প্রতি বিঘায় প্রায় ১৫-১৬ মণ ফলন হয়েছে। সামান্য রোগ-বালাই হলেও তেমন সমস্যা হয়নি। তবে সার, কীটনাশক, শ্রমিকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে।

ধান ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া বলেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার শুরু থেকেই ধানের দাম ভালো যাচ্ছে। জাতভেদে প্রতি মণ মোটা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হচ্ছে।

মনপুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান তাওহীদ বলেন, মনপুরার আমন মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় আমন ক্ষেতে গত বছরের থেকে এবার রোগবালাই কম। আমরা আশা করছি, কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাবে।  বন্যায় বেশকিছু জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্রি-৫১, ৫২ জাতের ধান পানিসহিষ্ণু। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দিয়েছি।


সংবাদটি শেয়ার করুন....