
র্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত আছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, যারা এখন ‘মবের ভয়’ পাচ্ছেন, তারা হয়ত ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই সংলাপের আয়োজন করে।
প্রেস সচিব বলেন, অনেকে (সাংবাদিক) বলেন, মবের ভয়ে আছি। আমি তো কোথাও সেই ভয় দেখি না। যিনি মবের ভয় করছেন, তিনি হয়তো তখন দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। এখন আপনি যদি দোসর হন, আমি তো আপনার পাপ ক্লিন আপ করবো না। যারা আজ বলছেন, মবের ভয় আছেন বেশিরভাগই দেখবেন তারা দোসর ছিলেন। ভয়টা নিজে নিজে থেকেই আসছে। আমরা বলেছি, কোনো গণমাধ্যমে কোনো ধরনের আক্রমণ আমরা সহ্য করবো না। সে কথা আমরা রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, বাইরের দেশে গণমাধ্যম নিজেদের ভুল স্বীকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। ওরা ন্যায়পাল রাখে, দেখে তাদের রিপোর্ট ঠিক ছিল কি না। ভুল থাকলে প্রকাশ্যে স্বীকার করে ক্ষমা চায়। কিন্তু এখানে তো সেই সংস্কৃতি নেই।
শফিকুল আলম বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, গত ১৫ মাসে আমরা কোনো টিভি বা সংবাদপত্র বা মিডিয়ায় কোনোরকম হস্তক্ষেপ করিনি। অন্তর্বর্তী সরকার ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে কোনো সাংবাদিককে হয়রানি করেনি।
গত ৫৪ বছরে একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সাংবাদিকরা সত্যিকারের স্বাধীনতা ভোগ করেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত ১৫ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় ইস্যু ছিল মিথ্যা নিউজ বা অপতথ্য রোধ করা। সেন্টমার্টিন দখল হয়ে গেছে বলে শত শত মিথ্যা নিউজ হয়েছে। অন্যান্য ইস্যুতেও প্রচুর মিথ্যা নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিকতা তলানিতে ঠেকিয়েছিল। সে জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি।
সংলাপে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, এখন মিডিয়া হাউস নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তারা শুধু সংবাদ পরিবেশন করে না, ভেটো ক্ষমতার মতো আচরণ করতে চায়। যেন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই ঘটতে না পারে। সাংবাদিকদের সংগঠন থাকতে পারে, তবে সেটি দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এই সময়ের মধ্যে ড. ইউনূসের হাতে যেসব সংস্কারের কাজ আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করুন। এক সপ্তাহের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাতিকে সামগ্রিক বিষয়ে অবহিত করুন।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলেই কেবল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে। শেখ হাসিনার সময় শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ৫ আগস্টের পর বহু গণমাধ্যমের মালিকানা ও শীর্ষপদে পরিবর্তন এসেছে। দলীয় মদদপুষ্ট লোকেরা সেখানে গেছেন। তারা আগে এক দলের ন্যারেটিভ প্রচার করতেন, এখন অন্য দলেরটা করছেন।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, গণমাধ্যমে দৃশ্যমান সংস্কার চোখে পড়েনি। শেখ হাসিনা আমলের সিস্টেমই এখনও চলছে। এর মধ্যেই দুটো টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো হতো, কিন্তু তা হয়নি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকরা যদি রাজনীতি ও নির্বাচন করতে চান, তাহলে অবশ্যই তাদের সাংবাদিক সংগঠনগুলো থেকে পদত্যাগ করে আসতে হবে।
সিজিএস’র প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। আরও বক্তব্য দেন ড. সাইমুম পারভেজ, মঞ্জুর মঈন, তাসলিমা আখতার, দিদার ভূঁইয়া, রাজেকুজ্জামান রতন, নাসরিন সুলতানা মিলি, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল প্রমুখ।
