
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ-পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতা এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মসনদ অটুট রাখার কৌশলগত কারণে সামরিক বাহিনীর পাকিস্তানি অফিসারদের কার্যকলাপে, বিশেষ করে ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এক ধরনের অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছিল। তবে পরের দিন ২৪ মার্চ ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক না করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাড়লেও চট্টগ্রামের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে একই দিনে ঘটেছিল অনন্য এক ঘটনা। ঘটনার মূলে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র খণ্ড-৯-এর উদ্ধৃতি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) সৈয়দ আবু ব্কর সিদ্দিক বলেন, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সেন্ট্রাল অর্ডিন্যান্স ডিপোর (কোড) কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারের পাহারায় ছিলেন হাবিলদার কাদের ও তৎকালীন সিপাহি পরবর্তীতে হাবিলদার নুরুল হক।
মেজর (অব.) সৈয়দ সিদ্দিক বলেন, ‘লে. কর্নেল আবদুর রশিদ জানজুয়ার নির্দেশে কায়দা করে ১৭ বেলুচ থেকে সৈনিকরা আসে এই অস্ত্রাগারের অস্ত্র নিয়ে যেতে আসলে হাবিলদার কাদেরদের নির্দেশে নুরুল হক আদেশ আনার জন্য ছুটে যান অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়ার বাসায়। কিন্তু সেখানে জিয়া ছিলেন না। বেগম খালেদা জিয়া জানতে চান – কি হয়েছে? ঘটনা শোনার পর তিনি (বেগম জিয়া) স্পষ্ট ভাষায় জানান ‘মেজর জিয়ার হুকুম ছাড়া একটা সুইও ষোলশহর থেকে বাইরে যাবে না।’ নূরুল হক ‘কোডে’ ফিরে কাদেরকে ম্যাডামের নির্দেশের কথা জানালে তিনি (কাদের) সতর্ক হয়ে যান। ততক্ষণে বেলুচের সৈন্যরা ‘৭৬ ও ৭৭ আর আর রাইফেল’ তাদের গাড়িতে তুলে ফেলেছে দেখে হাবিলদার কাদের বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে বেলুচ সৈন্যদের গাড়িতে গুলি করার উদ্যোগ নেয়। বেগতিক পরিস্থিতিতে বেলুচের সৈন্যরা সব অস্ত্র রেখে যেতে বাধ্য হয়।’
অস্ত্র সরানোর জন্য লে. কর্নেল জানজুয়ার হুকুম ছিল, কমান্ডিং অফিসারের এই হুকুমও সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশের কাছে অগ্রাহ্য হয়ে যায় বলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক সময়ের মেধাবী এই কর্মকর্তা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দূরদর্শী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের কারণে, বলা যায় সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালনে সেদিন রক্ষা পায় ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের ১১০০ সৈন্য এবং মেজর জিয়া। সেদিন যদি তাঁর (বেগম খালেদা জিয়ার) তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত না দেওয়া হতো তাহলে পুরো ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট অস্ত্রহীন হয়ে পড়ত। এমনকি মেজর জিয়ার পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করা, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ- এসব সব কিছুই হয়তোবা বানচাল হয়ে যেত।
সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই ঘটনাটি একটি মাইলফলক। কমান্ডার না হয়েও কমান্ডারের ভূমিকা নিয়েছিলেন গৃহবধূ খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাই সালাম জানাতে হয় বেগম খালেদা জিয়াকে।
