
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ সোমবার জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জোনরেল অনীক রুশদ হক।
দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার আসামির বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর এ মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত।
রায়ে সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছিলেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান। ওই বছর ১৪ নভেম্বর রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার চারদিন পর ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদার আইনজীবীরা।
৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার আপিলের সঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনও করা হয়েছিল।
বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড বাতিল ও খালাস চাওয়া হয় আপিলে। পরে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল এই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এরপর গত ছয় বছর এ মামলার কোনো অগ্রগতি ছিল না।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। পতনের পরদিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি।
দণ্ড মওকুফের পরও জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আইনিভাবে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। যে কারণে গত বছর নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে দুটি আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
দুটি আবেদনের একটি ছিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিলের পেপারবুক তৈরির অনুমতি চেয়ে আবেদন। গত বছর ৩ নভেম্বর অনুমতি পাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি করা হয়। সে ধাারাবাহিকতায় শুনানির পর ২৭ নভেম্বর রায় দেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসনের আপিল মঞ্জুর করে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভটু আপিল) করে রাষ্ট্রপক্ষ। দুদকও পরে আবেদন করে। দুটি আবেদনে শুনানির পর তা খারিজ করে দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে হাইকোর্টের খালাসের রায়ই বহাল থাকল।
