
মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে দুই মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারী করে সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার শেষ পর্যায়েও জেলেদের ভাগ্যে জুটেনি জেলে পুর্নবাসনের সরকারী বরাদ্ধের চাউল। তবে কবে নাগাদ চাল পাবেন সে ব্যাপারে খোদ মৎস্য বিভাগও কিছু বলতে পারছে না ।এতে ধার-দেনা করে কোনমতে সংসার চালিয়ে শেষ সময়ে হাহাকারে পড়েছে জেলে পরিবারগুলো ।
জানা গেছে, ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ভোলার মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রতিবছর মেঘনা- তেঁতুলিয়া সব ধরনের মাছ শিকারে ৬০ দিনের (১লা মার্চ- ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। মনপুরা উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জন।
গত ১লা মার্চ- ৩০ এপ্রিল ৬০ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুর্দিন যাচ্ছিল মনপুরার মেঘনা নদীতে মাছ শিকারের জেলেরা । এই দীর্ঘ সময় ধরে ধার-দেনা করে সংসার চালানো ছিল তাদের কাছে বড় কষ্টের বিষয়। এ সময় জেলেদের জন্য সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ ছিল। প্রথম কিস্তিতে ৪০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ সময়ে এখনো দ্বিতীয় কিস্তির ৪০ কেজি চাল পাননি তারা। কবে নাগাদ পাবেন সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই জেলেদের।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারী মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভোলার মনপুরায় বিচ্ছিন্ন ঢালচর জেলে সমিতি ও ২৪ ফেব্রুয়ারী উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ চরগোয়ালিয়া আর্দশ মৎস্যজীবি গ্রাম সংগঠনের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা করে আশ্বাস দেন জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ না ধরলে, সরকারী পুর্নবাসনের চাউল সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও জেলেদের দাবীর প্রেক্ষিতে পুর্নবাসনের চাউল প্রাপ্তি জেলের সংখ্যা বাড়ানো চেষ্ঠা করা হবে বলে উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেন।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার আশ্বাসের পরও নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ও পুর্নবাসনের চাউল না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুসছে জেলেরা।
জেলে মো.আবুল বাসার বলেন, কিছু দিন পর পর সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়, আমরা সেই নিষেধাজ্ঞা মানি। কিন্তু সরকার যে চাল আমাদেরকে দেয়, আমরা সেই চাল কখনোই ঠিকমতো পাই না। এমনকি এবারের এই ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞার চালও আমরা একবারও পাইনি। সব সময় শুধু আশাই দেয়, কিন্তু কিছুই দেয় না।
জেলে বশির মাজি , ইসমাইল মাঝি , রহিম মাজি , সামছু, রহিম, সহ অনেকে জানান, উপদেষ্টার আশ্বাসের পরও মনপুরার বেশিরভাগ জেলে ১ম কিস্তির চাউল পায়নি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতে আর তিনদিন এখনও দ্বিতীয় কিস্তির চাউল পায়নি কোন জেলে। ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছি। জেলেদের কথা মনে রাখেনি উপদেষ্টা। তাই জেলেদের চাউল বরাদ্ধের কথা ভুলে গেছেন। এভাবে জেলেদের সাথে করলে আগামীতে সরকারী নিষেধাজ্ঞা মানতে পারেব না বলে জানান জেলেরা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মনপুরা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জন। এর বিপরীতে সরকার ১ম কিস্তিতে ৬ হাজার ৬ শত জেলের জন্য ৪০ কেজি করে চাউল বরাদ্ধ দেয়। এতে জেলেদের বিরাট অংশ ১ম কিস্তির পুর্নবাসনের চাউল পায়নি। এদিকে ২য় কিস্তির চাউল বরাদ্ধ না পাওয়ায় জেলেদের মধ্যে বিতরন হয়নি।
মনপুরার জেলে নেতারা অভিযোগ করেন বলেন, মৎস্য উপদেষ্টা জেলেদের বরাদ্ধের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্ঠা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন কিন্তু ওল্টো আগের চেয়ে বরাদ্ধের সংখ্যা কমে গেছে। আগামীতে নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান জেলে নেতারা।নিবন্ধিত জেলের বাহিরো অনেক জেলে রয়েছে এই উপজেলা ।
এই ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন জানান, ২য় কিস্তি জেলে পুর্নবাসনের চাউল বরাদ্ধ না পাওয়ায় জেলেদের দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১ম কিস্তির চাউল অধিকাংশ জেলেরা পায়নি এমন প্রশ্নে তিনি জানান বরাদ্ধ যা দেওয়া হয়েছে তা আনুপাতিকহারে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে জেলেদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বনিক জানান, ২য় কিস্তির চাউল বরাদ্ধ না আসায় উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে দ্রুততার সাথে বন্টন করে জেলেদের মধ্যে দেওয়া হবে।