
বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মণিপুর সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দীর্ঘ টালবাহানার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তিন দিনের সফর শুরু হবে। সফরে মিজোরাম ও আসাম থাকলেও মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মণিপুর।
২০২৩ সালের মে মাসে জাতিগত সংঘর্ষে জ্বলে ওঠে রাজ্যটি। কুকি-মেইতেই বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। নিহত হন শতাধিক মানুষ, আহত ও বাস্তুচ্যুত হন বহু মানুষ। ঘরছাড়া মানুষরা এখনও শরণার্থী শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে মণিপুর রাজ্য সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং বারবার শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে রাজ্যটিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়।
এই দীর্ঘ সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি কখনও মণিপুর সফর করেননি। অথচ বিশ্বের নানা দেশে তাকে যেতে দেখা গেছে। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী মণিপুরবাসীর পাশে দাঁড়াতে চান না। মোদির নীরবতা দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি করে।
গত শুক্রবার কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘বিদেশ সফরের জন্য মোদি সাহেব সময় পান, কিন্তু মণিপুরের জন্য সময় পান না। ‘
তার বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরপরই মোদির মণিপুর সফরের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিরোধীদের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অনেকের মত।
বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী এই সফরে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে তিনি শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেবেন। তবে বিরোধী শিবিরের মতে, এতদিনে এই সফর অনেক দেরিতে হচ্ছে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কেবল সফর নয়, কার্যকর পদক্ষেপ দরকার।
মণিপুরে মোদির সফর তাই শুধুই রাজনৈতিক নয়, প্রতীকী দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সফর বিজেপির জন্য পরীক্ষার মুহূর্ত। কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় রাখতে হলে মণিপুরের সংকট সমাধান অপরিহার্য।
তবে সাধারণ মানুষ চান বাস্তব সমাধান। তারা আশা করছেন, পুনর্বাসন, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে মোদি সুস্পষ্ট ঘোষণা দেবেন। কিন্তু আদৌ তা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। কারণ এতদিন ধরে রাজ্যবাসীর ক্ষোভ জমে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মোদি সফরে গেলে অন্তত একটি প্রতীকী স্বস্তি মিলবে। কিন্তু মণিপুরের গভীর সংকট দূর করতে কেবল সফর নয়, ধারাবাহিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আর সেটিই এখন প্রশ্নের মুখে।