
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার (৪ নভেম্বর) নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এতে আগের বেশ কিছু বিধান পরিবর্তনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে একগুচ্ছ নতুন বিধান। সংশোধিত এই আরপিওকে ভিত্তি করেই দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি শিগগিরই চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নতুন কী থাকছে
সংশোধিত আরপিওতে আদালত ঘোষিত ফেরারি বা পলাতক আসামির প্রার্থী হওয়া ও ভোট করায় নিষেধাজ্ঞা যুক্ত হয়েছে।
প্রায় দেড় দশক পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী ফের যুক্ত হয়েছে। একক প্রার্থী থাকলে ব্যালটে ‘না’ ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
একাধিক রাজনৈতিক দল জোট করলেও প্রার্থীকে নিজের দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে—এ বিধানও এবার যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া সমসংখ্যক ভোট পেলে লটারির বদলে পুনঃভোটের সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, হলফনামা ও জামানত
১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আদালত কর্তৃক ফেরারি/পলাতক ঘোষিত হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির মতো লাভজনক পদের দায়িত্বে থাকলেও প্রার্থী হওয়া যাবে না।
হলফনামায় দেশে-বিদেশে আয়ের উৎস উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে। মনোনয়নপত্রের জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ২০ হাজার।
ভোটগ্রহণ ও প্রশাসনিক ক্ষমতা
৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে ভোট বিঘ্নিত হলে বা ব্যালট বাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন এবং ইসি নতুন তারিখ ঘোষণা করবে। ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা হয়েছে।
প্রবাসী, কর্মস্থল-বহির্ভূত সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাবন্দিদের জন্য আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং যুক্ত করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষণ
২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের বিধান স্পষ্ট করা হয়েছে।
৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোট গণনার সময়ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির সুযোগ রাখা হয়েছে। গণনা শেষে ফল ঘোষণার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে বাতিল ব্যালট পুনরায় পরীক্ষা করতে পারবেন।
ব্যয়, অনিয়ম ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল উভয়কে যুক্ত করা হয়েছে। ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুদানের উৎস বিস্তারিতভাবে অনলাইনে প্রকাশ বাধ্যতামূলক।
৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব ও এআইয়ের অপব্যবহার নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ৯১ নম্বর অনুচ্ছেদ ইসিকে ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজনে পুরো আসনের ফল বাতিল করার। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে; দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত হয়েছে।
অন্যান্য পরিবর্তন
ডিআইজি পদ পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির তথ্য ইসিকে জানাতে হবে। দল নিবন্ধন, অনুদান ও নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিতের বিধান যুক্ত হয়েছে। কয়েকটি অনুচ্ছেদে (৭৪, ৮১, ৮৭, ৮৯) ছোটখাটো সংশোধন আনা হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের সময় গণভোটের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হলে কমিশনের কর্মপরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
সংশোধিত আরপিও জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচনি আইন সংস্কারের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। এখন এই সংশোধন অনুযায়ী খুব শিগগিরই দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
