ঢাকারবিবার , ৩ নভেম্বর ২০২৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উৎসব
  5. ঐতিহ্য
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. চাকরি
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. ধর্ম
  14. নির্বাচন
  15. পরিবেশ

‘চ্যাম্পিয়ন হলে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় পরে আর খবর নেয় না’

ক্রীড়া প্রতিবেদক
নভেম্বর ৩, ২০২৪ ৩:৪৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

‘আমার মেয়ে জিতেছে, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সবার কাছে দোয়া চাই। গতবার প্রশাসন নিজেই বাড়িতে এসে বলে গেছে, জমি-ঘর দেবে ও সড়ক করে দেবে কিন্তু দেয়নি। এ জন্য আমার মেয়ে ঋতুপর্ণা দুঃখ পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন হলে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পরে আর কেউ খবর নেয় না। ঋতুকে যেন নতুন সরকার একটা চাকরি দেয় সেই দাবি জানাই।’

আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সেরা খেলোয়াড় মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমার মা বসুমতি চাকমা। ২০২২ সালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা ঘরে তুলে বাংলাদেশ। তখন রাঙামাটি থেকে জাতীয় দলে খেলা ঋতুপর্ণা ও রূপনা চাকমার জন্য বাড়ি, সড়ক, সেতু আর সুপেয় পানির ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু রূপনা চাকমার অসম্পূর্ণ বাড়ি নির্মাণছাড়া দুই বছরেও এসবের বাস্তবায়ন না হওয়ায় আক্ষেপ জানিয়েছেন তাদের পরিবার।

রূপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমা বলেন, ‘আমার মেয়ে তো সারা জীবন খেলতে পারবে না। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার মেয়ের জন্য একটা স্থায়ী চাকরি চাচ্ছি। যাতায়াতের রাস্তা দেবে বলেছিল কিন্তু দেয়নি। সরকারের দেওয়া টিনশেড বাড়িটাতেও সবকিছু নেই। সিলিং নেই। ফ্যান নেই। পানির ব্যবস্থা নেই। ফার্নিসার নেই।’
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় খুশি ছড়িয়েছে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। সেই দলের সেরা খেলোয়াড় মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা ও সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার রাঙামাটির বাড়িতেও সেই আনন্দের ঢেউ লেগেছে। তবে ছাদখোলা বাসে সড়কপথে রাজকীয় সংবর্ধনা পাওয়া দলের এই দুই খেলোয়াড়ের বাড়িতে যেতে সড়কই নেই। যেতে হয় ধানখেতের আল পেরিয়ে আর নদীর তীর ধরে খাড়াই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে।

ঋতুপর্ণা ও রূপনা চাকমার বেড়ে ওঠা সাধারণ পাহাড়ি পরিবারে। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া মগাইছড়ি আগাপাড়ায় ঋতুপর্ণার বাড়ি। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা ও একমাত্র ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পর মাকে নিয়েই ঋতুপর্ণার সংসার। জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ভূঁইয়োআদাম গ্রামে রূপনা চাকমার বাড়ি। বাবা মারা গেছেন। দুই ভাই ও বোন বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। তাই রূপনা মায়ের সঙ্গে একাই থাকেন।

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ থেকে জাতীয় দলে খেলা মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা, রূপনা, আনাই ও আনুচিংয়ের বেড়ে ওঠা। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্যে গর্বিত বিদ্যালয়টির কোচ ও শিক্ষক।

কোচ শান্তিময় চাকমা বলেন, ‘ছোট ছোট এই মেয়েদের আমি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আজ তারা বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনল। আমি গর্বিত। বর্তমানে স্কুলে যেসব খেলোয়াড় আছে তাদের সহযোগিতা করা হলে রূপনা, ঋতুপর্ণা, মনিকাদের মতো আরও খেলোয়াড় বের করতে পারব।’

ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, ‘ওরা যখন জিতে, তখন তাদের নিয়ে মাতামাতি, হইচই, সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক মাস পরেই সবাই ভুলে যায়। যারা প্রতিশ্রুতি দেয় তারাও ভুলে যায়।’

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে রাস্তা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে অনুরোধ ও নির্দেশনা দেব। তারা যেন দ্রুতই কাজগুলো করে দেন। রূপনা চাকমার বাড়ির সিলিং করে দেব। ঋতুপর্ণা চাকমার ঘর প্রয়োজন হলে সরকারি বরাদ্দ পেলে অথবা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে একটা ঘর করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

ঋতুপর্ণা ও রূপনা চাকমার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সরকারি চাকরি ও প্রশাসনের দেওয়া আগের প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি জানিয়েছেন তাদের পরিবার।


সংবাদটি শেয়ার করুন....