
পরিবারে প্রথম সন্তানের জন্ম। হাসপাতালে আনন্দ উচ্ছ্বাস। ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এর পরও মায়ের মনে উদ্বেগ। কোল আলোকিত হলেও তিনি ভাবছেন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা। কারণ এই সন্তান কোনো দিন বাবার মুখ দেখতে পারবে না। সাড়ে ৫ মাস আগে অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন তার বাবা মো. শাজাহান।
নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ওমর ফারুক। শুক্রবার বিকালে ভোলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় তার।
স্বজনরা জানান, মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে কয়েক বছর আগে সপরিবারে ঢাকা চলে যান ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুরের বাসিন্দা শাজাহান। থাকতেন কামরাঙ্গীর চরের চান মসজিদ এলাকায়। ফুটপাতে ব্যবসা করে চলত পরিবারের ভরণপোষণ। আড়াই বছর আগে একই উপজেলার ছোটধলি গ্রামের ফাতেহা বেগমকে বিয়ে করেন। চার মাসের প্রসূতি স্ত্রীকে রেখে ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওইদিন সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন শাজাহান। আজিমপুর গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
ফাতেহা বেগম জানান, স্বামী টাকা বা সহায়সম্পদ রেখে যেতে পারেননি। ঘরবাড়িও নেই। বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে আছেন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ছেলেকে বড় করা ও পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
এদিকে নবজাতকের আগমন ঘিরে স্বজনদের মধ্যে ছিল বাড়তি উচ্ছ্বাস। আজ সকালে হাতে ফুল, নানা খাবারে সাজানো ডালা আর নতুন পোশাক নিয়ে ওমরকে দেখতে হাসপাতালে আসেন ভোলার ডিসি মো. আজাদ জাহান। সঙ্গে ছিলেন পৌর প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, সরকারি কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ বিভিন্ন পেশাজীবী।
শাজাহানের পরিবারের সচ্ছলতার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সমন্বয়ক রাহিম ইসলাম ও কামরুন নাহার এ্যানি জানান, প্রয়াত শাজাহানের স্ত্রী-সন্তানের পুনর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি তারাও এগিয়ে আসবেন।
নবজাতকের ভবিষ্যৎ ও পারিবারিক নিরাপত্তায় সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ডিসি মো. আজাদ জাহান।
