
সৈয়দ জিলাল আহমেদ, ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার:
মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল ও রাজনগরের সাথে সংযোগকারী ৭৬ কিলোমিটার পথটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ৫বছর পরও এখনো চলাচলের অনুপযোগী। অনেক বাসিন্দা দাবি করেছেন যে, প্রশ্ন সাপেক্ষ তথাকথিত কর্তৃপক্ষ পূর্ববর্তী দুই বছরে প্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণের মাত্র ৫০% সম্পন্ন করেছে। ৭৬কিলোমিটার সড়কের উল্লেখযোগ্য মাত্র ৩৭কিলোমিটার পুনর্নির্মাণ কাজ ডিসেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে শেষ হয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারীর পরে, প্রধান ঠিকাদার জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করে এবং গত কয়েক মাস ধরে, অস্পষ্ট কারণে, বালি, পাথর এবং ইট সহ বিল্ডিং সরবরাহ গুলি রাস্তার পাশে রাখে। এর পরে, ২০২৩ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত ইট দিয়ে গর্ত গুলি ভরাট ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল যাত্রীকে অনেক কষ্ট করে অতি সতর্কতার সাথে পথে চলতে হয়। এর ফল সশ্রুতিতে এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বহু মানুষ আহত হয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছে, এমনকি অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। রাস্তার এই দুরবস্থার কারণে ফসল এবং অন্যান্য পণ্য সঠিক ভাবে স্থানান্তর করতে না পারায় পরিবহন বিলম্বের কারণে পথেই সবজি, ফল ও মাছ পচে গেছে। এছাড়াও এই রাস্তায় পণ্য পরিবহন খরচও অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা, কেন গত ৫বছর ধরে এত গুরুত্বপূর্ণ রুটটি এমন বেহাল দশায় পড়ে আছে।
অনেক পরিবহন মালিক দাবি করেছেন যে ড্রাইভিং করার সময় তাদের গাড়ি প্রায়শই বিকল হয় যাচ্ছে ,এতে তারা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার সাথে সংযোগকারীরা স্তাটি প্রাথমিক ভাবে তিনটি উপজেলা: কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল এবং মৌলভীবাজার জুড়ে ১৬টি ইউনিয়নের ১০০,০০০ মানুষ ব্যবহার করে।
কর্মকর্তারা বলছেন যে, ঠিকাদার অন্তর্বর্তী সময়ে আরও সময় বাড়ানোর জন্য আবার প্রার্থনা করছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেছেন যে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে এবং অন্যান্য সাব-কন্ট্রাক্টরদের সাথে প্রধান ঠিকাদারদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে রাস্তা মেরামত বিলম্বিত হচ্ছে। সড়কের মূল ঠিকাদার দুইজন উপ-ঠিকদারকে ঠিকাদারি দিয়েছে। এসব সাবকন্ট্রাক্টর সবাই স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা। বলা হচ্ছে যে, তারা সবাই স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। স্থানীয় জনগণের চরম দুর্ভোগের বিষয়টি উপেক্ষা করে তারা এই ৫বছরের সড়ক নির্মাণ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমান কালো টাকা আয় করেছে। উল্লেখ্য, অনেক পরিবহন কোম্পানির মালিক বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা। তাই তারা এই অসমাপ্ত ভাঙা রাস্তা দিয়ে স্থানীয় পণ্য পরিবহনের জন্য উচ্চ পরিবহন খরচ নেয়। দুই ভাবেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা সুবিধা পাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য এই প্রকল্পের সব ভালো-মন্দ জেনেও চোখ বন্ধ করে থাকছেন, সাধারণ মানুষ এমনটিই বলছে।
স্থানীয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা এবিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। এদেশের একজন সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমি এই বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি তদন্তের জন্য এবং সরকারি অর্থের অপব্যবহারের জন্য, আরও অধিকতর তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমনকমিশন (দুদক) এ বিষয়টি রিপোর্ট করার জন্য। কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য যারা দায়ী তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।